খালদুনের মুকাদ্দিমা, মহাজাগতিক মুগ্ধতার রহস্য



“ইতিহাসের মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে, কীভাবে সমাজের পরিবর্তিত অবস্থা তাদের সম্পর্কের জালে প্রভাব ফেলে। কীভাবে একটা গোত্র সাম্রাজ্য বিস্তার করে এবং কীভাবে তার পতন ও বিকাশ হয়ে থাকে। কীভাবে অন্য সাম্রাজ্য এসে প্রাচীন কোন সাম্রাজ্যের পতন আর নয়া সাম্রাজ্যের উত্থান ও বিস্তার ঘটায়।”—এ নীতিকথা ইবনে খালদুন তার মহাগ্রন্থ আল-মুকাদ্দিমায় লিখেছিলেন।

 মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসকে যারা চর্চার নৈপুণ্যে এবং বহুমাত্রিক প্রতিভায় গৌরবান্বিত করেছেন-সমৃদ্ধ করেছেন, ইবনে খালদুন তাদেরই একজন। ফ্রান্সের রোজেন্থাল কর্তৃক ইবনে খালদুনের বিশ্ব ইতিহাসের ভূমিকা—আল-মুকাদ্দিমা–ইংরেজিতে অনুদিত হওয়ার পর বিদ্যাজাগতিক পাড়ায় তাকে নিয়ে নতুন করে আগ্রহ সূচিত হয়। 

 তাঁর পূর্ণনাম: ওলীউদ্দীন আবু যায়েদ আব্দুর রহমান ইবনে মোহাম্মদ ইবনে আল হাসান ইবনে মোহাম্মদ ইবনে জাবির ইবনে মোহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে খালদুন রহ.। তবে ওলীউদ্দীন তাঁর উপাধি এবং আবু যায়েদ তাঁর উপনাম। বংশের পূর্বপুরুষ খালদুনের নামানুসারে তাদের গোত্রের নাম ও পরিচিতি। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় ‘ইবনে খালদুন’ বা স্রেফ ‘খালদুন’ নামে সমাদৃত হয়েছেন। 

 ১৩৩২ (৭৩২ হি.) সালে মাহে রমজানে ২৭ ই মে, উত্তর আফ্রিকা এবং আন্দালুসিয়ার অন্যতম সম্ভ্রান্ত বনু খালদুনের এক পরিবারে এই যশস্বী মনীষার জন্ম। উত্তর আফ্রিকা এবং আন্দালুসিয়ার রাজনীতির চাবিকাঠি ছিল বনু খালদুন পরিবারের কব্জায়। যার ফলে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা 

ইবনে খালদুনের অস্তি-মজ্জায় উত্তরাধিকার সূত্রেই গাঁথা ছিল।

 বনু খালদুনের আদি নিবাস ছিল আন্দালুসিয়ার সেভিলে। সেভিলে বনু খালদুনের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল প্রচুর। 

উমাইয়া শাসনের বিরুদ্ধে ইবনে খালদুনের পূর্বপুরুষ কুরাইব ইবনে খালদুনের বিদ্রোহের ক্ষমতা অন্তত এরই সাক্ষ্য দেয়। 

 রাজা ফার্ডিন্যান্ড (৩য়) এর রিকনকুইস্তা থেকে বাঁচতে ইবনে খালদুনের পূর্বসুরী হাসান ইবনে মুহাম্মদ (খালদুনের পিতামহের পিতামহ) ১৩শ শতাব্দীতে তিউনিসিয়ায় বসতি গড়েন। তবে কারো কারো মতে বনু খালদুনের আদি নিবাস ছিল ইয়ামানে। যাদের বংশলতিকা পৌঁছেছে সাহাবী ওয়ালিদ ইবন হুজর রা. পর্যন্ত। কিন্তু মুশকিল হল, খোদ ইবনে খালদুনই এই অভিমত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

 উত্তরাধিকার সূত্রে ইবনে খালদুনের পিতৃপুরুষের পেশা রাজনীতি হলেও তার পিতা মোহাম্মদ আবু বকর রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ পথ ছেড়ে জ্ঞানার্জনের তপস্যায় পাড়ি জমিয়ে ছিলেন দূর-দূরান্তে। ১৩৪৮ সালের মহামারীতে ইবনে খালদুনের পিতা মৃত্যু বরণ করেন। তার পিতার জ্ঞান-সাধনার এই সৌরভ মৌ মৌ করে ছড়িয়ে পড়ল বনু খালদুন পরিবারে। এই বিদ্বান পিতার ঔরস থেকে মুসলিমজাহান উপহার পেল জগদ্বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুন এবং তার অনুজ ভাই আবু জাকারিয়া ইয়াহিয়া ইবনে খালদুন। ইয়াহিয়া পরে ইতিহাসবিদ এবং প্রশাসক হিসেবে খ‍্যাতি লাভ করেছিলেন। 

 ইবনে খালদুন তার প্রাথমিক পড়াশোনা নিজ পিতার নিকটই সম্পন্ন করেন। অল্প বয়সে কুরআন হিফজ করে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তাফসির শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কুরআনের বিভিন্ন কেরাত রপ্ত করেন উস্তাদ সাদ ইবনে বোর্রালের নিকট। উত্তর আফ্রিকা ও আন্দালুসিয়ার প্রধান ফিকহী ধারা মালিকি মাযহাব ও হাদীস শাস্ত্রও যপ্ত করেন।

 মারিনি সুলতান আবুল হাসান ১৩৪৭ সালে উত্তর আফ্রিকা জয় করলে তিউনিসিয়ায় অনেক বিদগ্ধ আলেম, মুহাদ্দিস ও ফকীহদের আগমণ ঘটে। সে সময় এই মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগিয়ে বহু শায়খের কাছ থেকে ফিকাহ ও হাদীস শাস্ত্রে "ইযাজা" গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৩৪৯ সালের প্লেগ মহামারী তার শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটায়। কেননা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে তার পিতা-মাতাসহ শিক্ষকদের বড় একটা অংশ মৃত্যুবরণ করেন এবং বাকীরা তিউনিসিয়া ছেড়ে চলে যায়। পিতা মাতার মৃত্যুতে শোকাহত ইবনে খালদুনের পরিবারে নেমে আসে অভাব অনটনের ঘনঘটা।

 ১৪ শতাব্দীতে উত্তর আফ্রিকার রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল আগ্নেয়গিরির ন্যায় উত্তপ্ত। পুরো উত্তর আফ্রিকার কোথাও একটুও স্বস্তি ছিল না। এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ইবনে খালদুন তিউনিসিয়ার রাজ দরবারে সিলমোহর কারি পদে চাকুরি নেন। তৎকালীন হাফসী বংশের শাসক আবু ইসহাক হলেও ক্ষমতার চাবিকাঠি ছিল ইবনে তাফরেগীনের হাতে। ইবনে খালদুনকে তিনিই উক্ত পদে নিয়োগ দেন। 

 এরপর ১৩৫৪ সালে ইবনে খালদুন মরক্কোর রাজদরবার "ফেযে" এসে সুলতানের জ্ঞানসভায় জায়গা করে নেন। উক্ত জ্ঞানসভায় আন্দালুসিয়া এবং মাগরেবের মনীষীগণ পূর্ব থেকেই জ্ঞানসাধনায় রত ছিলেন। সেখানের রাজদরবারের প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন মরোক্কোর শাসক আবু ইনানের অগোচরে বুজির শাসক মোহাম্মদকে পালাতে সাহায্য করেন। এ কথা জানতে পেরে সুলতান তাকে তৎক্ষণাৎ বন্দী করেন। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সুলতানের মৃত্যু হলে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বপদে ফিরে আসেন। 

 কিন্তু ঝামেলা যেন ইবনে খালদুনের নিত্যসঙ্গী। সুলতান আবু ইনানের নির্বাসিত ভাই আবু সালিম নিজেকে সুলতান ঘোষণা করে খালদুনের সহযোগিতা কামনা করলেন। ইবনে খালদুন না করতে পারলেন না। ইবনে খালদুনের সহযোগিতায় আবু সালিম সিংহাসনে আরোহণ করলেন। আর ইবনে খালদুনকে তার প্রধান রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দান করেন। এর দুই বছর পর তিনি "মাজালিম" নামে প্রসিদ্ধ বিচারক পদ লাভ করেন।

 সুলতান আবু সালিমেরও মৃত্যু হয়ে গেল। মরক্কোর নতুন সুলতানের সাথে বনিবনা না হওয়ায় তিনি আন্দালুসে মুসলমানদের শেষ আমিরাত গ্রানাডায় পাড়ি জমান। গ্রানাডার রাজদরবারে তিনি বেশ সমাদারেই থাকতে লাগলেন। সুলতান মোহাম্মদ (৫ম) ও তার উজির বিখ্যাত কবি ইবনুল খাতীব তাকে বেশ সমীহ করলেন এমনকি ক্যাস্টলের রাজা পেড্রোর নিকট শান্তিচুক্তির জন্য তাকে দূত হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন।

 পেড্রোর রাজ দরবার ছিল বনু খালদুনের পূর্বপুরুষদের আদিনিবাস সেভিলে। সম্রাট পেড্রো খালদুনের প্রজ্ঞা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও দূতিয়ালিতে অভিভূত হয়ে তাকে সেভিলে ফিরে আসার অনুরোধ জানালেন। ওয়াদা করা হলো যে তাকে তার পূর্বপুরুষদের সকল বিষয়-সম্পত্তি কড়ায়গণ্ডায় ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু ইবনে খালদুন এই লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে শান্তিচুক্তি শেষ করে গ্রানাডায় ফিরে এলেন।

 তবে সুখ নামক শব্দটা হয়তো খালদুনের ভাগ্যলিপিতে ছিল না। সফল দূতিয়ালির কারণে দরবারে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ইবনে খাতীবকে ভাবিয়ে তুলে। অবশেষে এ কারণেই খালদুনের গ্রানাডার রাজদরবার ছেড়ে আসতে হয়।

 ১৩৬৫ উত্তর আফ্রিকায় ফিরে আসেন। উত্তর আফ্রিকায় তার ফিরে আসার কথা জানতে পেরে বুজির হাফসী শাসক আবু আব্দুল্লাহ যিনি তার সাথে কারাবন্দি থাকায় তার প্রজ্ঞা ও জ্ঞান সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি তাকে তার রাজ্যের প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু এই পদটাও তার কপালে বেশি দিন স্থায়ী হল না। ১৩৬৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতানের মৃত্যুর পর তিনি তিলিমসানের রাজদরবারে চলে আসেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে সুলতান আব্দুল আজিজ টেমসন দখল করে নিলে তিনি আবারো গ্রানাডায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তবে পথিমধ্যে সুলতান আব্দুল আজিজের সৈন্যদের হাতে বন্দী হন।

 এরপর তিনি সুলতান আব্দুল আজিজকে স্থানীয় যাযাবর গোত্রদের মধ্য থেকে সৈন্য সংগ্রহে সহযোগিতা করেন। অবাক করা ব্যাপার হলো মহামতি ইবনে খালদুন তার অন্য সব গুণের মতো এই কাজেও ছিলেন ষোলোকলায় সিদ্ধহস্ত। 

 উত্তর আফ্রিকার নগররাষ্ট্র থেকে দূরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করা বেদুঈন গোত্র সমুহের সঙ্গে খালদুনের বিশেষ সখ্য ছিল। আসলে তাদের স্বচ্ছ নীতি-নৈতিকতার কারণে ইবনে খালদুন তাদের বিশেষ সমীহ করতেন। তার "আসাবিয়া" তত্ত্বেও এর বিশেষ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। 

 সুলতান আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর ইবনে খালদুন আবার আন্দালুসে গমন করেন। কিন্তু আগের বারের মতো সুলতান মুহাম্মদ বিন আহমারের কাছে গুরুত্ব না পাওয়ায় পুনরায় উত্তর আফ্রিকায় ফিরে আসেন। ফিরে এসে তিলিমসানের (আলজেরিয়া) সুলতান আবু ওয়াদিদ হাম্মুর বিশেষ কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।  

 ১৩৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান আব্দুল ওয়াদিদ হাম্মু তাকে যাযাবর গোষ্ঠির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে পাঠিয়েছিলেন। পশ্চিমে আসার পর কালাত ইবনে সালামা দূর্গে এক বর্বর জাতির কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

 রাজনীতির মারপ্যাঁচ আর বারবার আনুগত্য পরিবর্তন করে করে খালদুন যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাই এবার অবসরের সময় এসে গেছে। নিজেকে নির্জনতায় আবদ্ধ করে জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম আল মুকাদ্দিমা রচনায় মন প্রাণ উজাড় করে দিলেন। এক জীবনে তার সাতঘাট মাড়ানো অভিজ্ঞতার মিশেলে তৈরি করলেন জগতের অনুপম মুগ্ধতা—আল মুকাদ্দিমা। 

 কালাত ইবনে সালামা দূর্গের নির্জনতায় ইবনে খালদুনের জীবনের তৃতীয় ধাপ শুরু হলো। দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে ইতিহাসের নিহিতার্থ আবিষ্কার করলেন। প্রথাগত পদ্ধতি বাদ দিয়ে গড়ে তুললেন ইতিহাস দর্শনের পথরেখা। যা আমরা আল মুকাদ্দিমার ছত্রে ছত্রে খুঁজে পাই।

 আল-মুকাদ্দিমা ১৩৭৭ সালের মধ্যে শেষ হলেও মূলগ্রন্থ "কিতাবুল ইবার ওয়াদ-দিওয়ান আল মুবতাদা ওয়াল খবর" লেখা শেষ করেন ১৩৮১সালে। অতঃপর সুলতান আবুল আব্বাসের অনুমতি নিয়ে জন্মভূমি তিউনিসিয়ায় ফিরে এসে পুরো গ্রন্থটি একটি কবিতার মাধ্যমে সুলতানকে উৎসর্গ করেন।

 তবে ইবনে খালদুন হয়তো রাজনীতি থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে চাইছিলেন। তাই সুলতানের অনুমতি নিয়ে ১৩৮২সালের হজ্বের উদ্দেশ্য তিউনিসিয়া ত্যাগ করেন। যেখানে আর কখনোই তিনি ফিরে যাননি।

 কিছুদিনের মধ্যে তিনি মিশরের রাজধানী কায়রোতে পৌঁছলেন। মিশরে এটা তার প্রথম সফর হলেও কালজয়ী জগদ্বিখ্যাত মুকাদ্দিমার বদলৌতে পুরো মুসলিম বিশ্বে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। তাই সুলতান আয-যাহির বারকুক এই রত্ন হাতছাড়া করতে চাননি। তিনি ইবনে খালদুনকে মালেকি মাযহাবের প্রধান বিচারপতির পদ অলংকৃত করার আবেদন জানালেন। তখন তিনি বিচারপতির পদ অলংকৃত করেন। এতসব কিছুর মধ্যে ১৩৮৮ সালে তিনি হজ্বব্রত পালন করেন।

 সুলতান আয-যাহির বারকুকের শাসনামলের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো আমির তাইমুর গুরিয়ানের

(তৈমুর লং) সিরিয়ায় আক্রমণ। এসময়ই ইবনে খালদুন আমির তাইমুর গুরিয়ানের সাথে সেই ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ (১৪০১) করেন যাকে অনেকেই গ‍্যাটের সাথে নেপোলিয়নের সাক্ষাতকে তুলনা করে থাকেন। 

 আমির তাইমুর ইবনে খালদুনকে তার প্রজ্ঞা ও পাণ্ডিত্যের কারণে বিশেষ সমীহ করেন। উত্তর আফ্রিকার ভৌগোলিক ইতিহাস সম্পর্কে খালদুনের কাছ থেকে ধারণা নেন। এমনকি আমির তাইমুরের অনুরোধে উত্তর আফ্রিকার ভৌগলিক ইতিহাস সম্বন্ধে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনও লিখেছিলেন। তবে এরই মধ্যে আমির তাইমুরের হাতে দামেস্কের পতন হলে খালদুনসহ মিশরীয় ও সিরিয় পন্ডিতগণ বিপদে পড়েন। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও খালদুন তার দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে আটকে পড়া পন্ডিত ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিরাপদে প্রস্থানের ব্যবস্থা করেন।

 এভাবে ইবনে খালদুন মিশরে ফিরে এলে বিচারপতির পদে পুনরায় আসীন হন। এ নিয়ে ছ'বারের মতো তিনি এই পদে আসীন হন। মিশরে অবস্থানকালীন সময়ে ইবনে খালদুন বিচারপতির পাশাপাশি অধ্যাপনাও করে ছিলেন। আল-আজহারসহ চারটি মাদরাসায় তিনি হাদীস ও ফিকহের দরস দান করেন। এছাড়া তিনি বেশকিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। সংখ্যায় তা অনেক কম হলেও গুণগত বিচারে অবিঃস্মরণীয়।

 তার সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা হলো সাত খন্ডে রচিত "কিতাবুল ইবার"। এই কিতাবের ভূমিকা স্বরুপ যে গ্রন্থটি লিখেছিলেন তাই আল মুকাদ্দিমা নামে পরিচিত। এই গ্রন্থের শেষে ইবনে খালদুনের আত্মজীবনী , "আত-তারিফ বি-ইবনে খালদুন" জুড়ে দেওয়া আছে।

 এছাড়া তার আরও দুটি রচনা রয়েছে, লুবাবুল মুহাসসাল ফি উলুমুদ্দিন যা ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীর একটি গ্রন্থের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আর অন্যটি হলো সুফি বিষয়ক একটি রচনা।

 তা ছাড়াও ইবনে খালদুনের রচিত আরও পাঁচটি রচনার কথা জানা যায়, কিন্তু সেগুলোর নাম ব‍্যতীত আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। যথা : 

১. কাসিদায়ে বুরদার ব‍্যাখ‍্যাগ্রন্থ

২. যুক্তিবিদ্যার রূপরেখা

৩. পাটিগণিতের স্বরূপ (হিসাবশাস্ত্র)

৪. ইবনে রুশদের রচনাবলীর পর্যালোচনা

৫. ইবনে খাতীবের একটি কবিতার ব্যাখ্যা ।

 অবশেষে ৮০৮ হিজরীর ২৬ শে রমজান (১৪০৬ খ্রি) , এই মহান মনীষী ইন্তেকাল করেন। তাকে বাবে নাসেরের সুফীদের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post