হাত্তিনের যুদ্ধ


 হাত্তিনের যুদ্ধ! (Battle of Hattin)


📍স্থান ও সময়:- ১১৮৭ সালের ৪ জুলাই শনিবার, গ্যালিলি সাগরের পশ্চিম তীর হর্নস অফ হাতিনে, লেভান্টের ক্রুসেডার রাজ্য এবং সুলতান সালাহউদ্দিন আইউবী'র বাহিনীর মধ্যে হাত্তিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।


📍নেতৃত্ব এবং সৈন্য সংখ্যা:-

ক্রুসেডারদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন;

গে অব লুসিগান(প্রধান), তৃতীয় রিমান্ড, বেলিয়ান অব ইবেলিন, জেরার্ড‌ দ্য রিডফোর্ড‌, রেইনল্ড অব শাটিলন, গার্নিয়ের দে নাবলুস, চতুর্থ হাম্পফ্রে, আইমেরি অফ লুসিগান এবং তৃতীয় জোসেলিন।


ক্রুসেড বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিলো ৫০,০০০ জন এর অধিক। যার মধ্যে ২০,০০০+ পদাতিক; ১,৫০০+ নাইট; ১৫,০০০+ অশ্বারোহী এবং ৭০০+ টারকোপল।


মুসলিম ফৌজের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন;

সালাহউদ্দীন আইউবী(প্রধান), মুজাফ্ফরউদ্দীন গোক্বরি, আল মুজাফ্ফর উমর, আল আদিল, ১ম আফজাল (সালাহউদ্দিন আইউবী'র পুত্র)


মুসলিম বাহিনীতে মুজাহিদের সংখ্যা ছিলো, সর্বোচ্চ ৩০,০০০ জন। যার মধ্যে ১২,০০০ জন অশ্বারোহী কমান্ডো এবং বাকী'রা তীরন্দাজ ও পদাতিক।


📍মূল যুদ্ধ:- মরুভূমিতে ক্রুসেড বাহিনী'কে অনেক্ষণ অবরুদ্ধ করে রাখার কারনে তারা ছিল পিপাসার্থ। তাই তারা ৩ জুলাই, টাইবেরিয়াস লেক এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। মুসলমানরা ক্রুসেড বাহিনী এবং জলের মধ্যে অবরোধ করে যাতে ক্রুসেড'রা শুষ্ক মালভূমিতে রাতারাতি ক্যাম্প করতে বাধ্য হয়। ইতিহাসবিদ ইবনুল আথিরের মতে, "মুসলমানরা তাদেরকে এমন ভাবে ঘেরাও করেছিল যে একটি বিড়ালও পালাতে পারত না। ফ্রাঙ্করা ছিল হতাশ ও তৃষ্ণায় যন্ত্রণাগ্রস্ত"। ক্রুসেডারদের আরো বিরক্ত করতে মুসলিম বাহিনী, চারদিকের সুকনো ঘাসে আগুন লাগিয়ে দেয়।

৪ জুলাইয়ের সকালে ক্রুসেডাররা, মুসলিম বাহিনীর সৃষ্ট আগুনের ধোয়ার কারণে কিছু দেখতে পারছিলো না। এর মাধ্যমে মুসলিম সেনাবাহিনীর একাংশ প্রতিপক্ষের উপর তীর ছুড়তে শুরু করে। ক্রুসেডারদের দুর্দশা এমন ছিল যে, রিমান্ডের ৫ জন নাইট মুসলিম নেতাদের কাছে মিনতি করতে গিয়েছিল যে তাদের দয়া করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক। কাউন্ট রিমান্ড টাইবেরিয়াস হ্রদের অবরোধ ভেঙ্গে দেয়ার দুটি প্রচেষ্টা চালান। দ্বিতীয়বার তিনি তার মূল বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন ও পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। রিমান্ড পালানোর ফলে গে অব লুসিগানের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়, ক্রুসেডারদের অনেক পদাতিক সৈন্য পালিয়ে যায়। পদাতিকদের সাপোর্ট না পাওয়ার কারনে, মুসলিম তীরন্দাজদের আঘাতে, অশ্বারোহী নাইট'রা ছিন্ন বিন্ন হয়ে যায়। পালাতে গিয়ে, অনেক সৈন্য প্রতিরোধ ছাড়াই নিহত হয় এবং বাকিদের বন্দী করা হয়।


📍ফলাফল:- খ্রিস্টানদের ’ট্রু ক্রস’ জব্দ হয়। ক্রুসেডারদের, মাত্র ৩,০০০ সৈন্য ছাড়া বাকি সকলে বন্দী হয় অথবা মৃত্যুবরণ করে। গে অব লুসিগান ছাড়া বাকি সকল বন্দী নাইট ও কমান্ডারদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সুলতান নিজেই তার তরবারির একক আঘাতে রেনাল্ড এর শীরোচ্ছেদ করেন। সৈন্যদের মধ্যে কেবল টারকোপোলস'দের (ইসলাম থেকে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান) মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post